ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প। বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের কদর এখন আর নেই বললেই চলে। একসময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, অফিস-আদালতসহ সবখানেই বাঁশ ও বেত সামগ্রী ব্যবহার করতো।
বাঁশ ও বেতের তৈরি ফলদানি, ঝুড়ি, বিউটি বক্স, কসমেটিক্স বক্স, চায়ের ট্রে, বিয়ের ঢালা, কুলা, কলমদানি, চেয়ার, বইয়ের শেলফসহ বিভিন্ন নান্দনিক ও টেকসই পণ্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে স্বল্প দামের প্লাস্টিক ও লৌহ্যজাত সামগ্রী। বর্তমানে বাঁশ-বেত সামগ্রীর প্রসার কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। তবুও বাপ-দাদার এই পেশাকে এখনও ধরে রেখেছে কিছুসংখ্যক পরিবার। দিন দিন বিভিন্ন জিনিস-পত্রের মূল্য বাড়লেও তুলনা দিয়ে বাড়ছে না এই শিল্পের কদর বা মূল্য। যার কারণে কারিগররা জীবন সংসারে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্লাস্টিক সামগ্রীর কদর দিন দিন বেড়ে যাওয়া বাঁশ-বেতের কুটির শিল্পের চাহিদা এখন আর নেই। তা ছাড়াও এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত এখন আর সহজলভ্য নয়।
উপজেলা সদরের বিবিরহাট সিনিয়র মাদ্রাসার সামনে বসে প্রাচীন এই তৈজসপত্রের হাট। এই হাটে গেলেই চোখে পড়বে হাতের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের তৈজসের পসরা। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কারিগররা তাদের তৈরিকৃত পণ্য নিয়ে সপ্তাহের দুইদিন আসেন এই হাটে। তবে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও এখানকার কিছু স্থায়ী দোকানেও পাওয়া যায় এসব তৈজসপত্র। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেপারিরা আসেন এ হাটে।
এ হাট থেকে পাইকারিতে ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন তারা। বেশ চাহিদা রয়েছে এ অঞ্চলের এসব তৈজসপত্রের।
বাজারে আসা কারিগর সৈয়দ মিয়া বলেন, আমরা নিজেরাই বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্য পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করতে যেতাম। এটা আমাদের আদি পেশা। এখন আগের মতো লাভ নেই। তবুও আমরা বাপ দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে কাজ করছি। বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন টিকে থাকতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। লাভ কম হলেও এ পেশায়ই বেঁচে থাকতে চাই।
সায়রা পাড়া গ্রামের কারিগর নুরুল হক বলেন, বর্তমানে স্বল্প দামে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় কুটির শিল্পের চাহিদা আর তেমন নেই। তাছাড়াও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত। এখন আর আগের মতো বাড়ির আশেপাশে বাঁশ ও বেত গাছ রাখছে না কেউ। সেগুলো কেটে বিভিন্ন চাষাবাদসহ ঘরবাড়ি তৈরি করছে মানুষ। তাই কাঁচামাল আর আগের মতো সহজে পাওয়া যায় না। তাইতো এ শিল্পের কোন ভবিষ্যৎ দেখছি না।